যুক্তি তর্কে প্রাণঘাতী (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস

March 26, 2020
মোঃ কামাল হোসেন , খাদ্য গবেষক, কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানী।
প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাস থামিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর গতি, ভেঙ্গে পড়ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি, মানব জাতি ভীত আজ নিতে নিঃশ্বাস, আকাশে বাতাসে শুধু লাশের দীর্ঘশ্বাস। ঠিক তখনই কিছু মানুষের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানা যুক্তি তর্ক, কখনো বুঝে আবার কখনো না বুঝে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে, তবুও যুক্তি তর্ক চলমান।

যুক্তি নম্বর – ১: ক২– ব২ (কম বয়সী মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি কম, বেশি বয়সী মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি)
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য মতে (১১ই ফেব্রুয়ারী ২০২০ অনুযায়ী) কম বয়সী অর্থাৎ ২০ – ৩৯ বছর বয়সী করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ০.২ শতাংশ [১]। কিন্তু ৭০ – ৮০ বা তারও বেশি বয়সী রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৮ – ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী ৭০ – ৮০ বা তারও বেশি বয়সী রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি যদিও ৩৫ – ৫০ শতাংশের কাছাকাছি কিন্তু সংক্রমণের হার মাত্র ৩ – ৫ শতাংশ [২]। যেখানে কম বয়সী অর্থাৎ ১৫ – ৫৯ বছর বয়সীদের সংক্রমণের হার প্রায় ২০ শতাংশের উপরে, মৃত্যুর ঝুঁকি ১ শতাংশেরও নিচে।
উল্লেখিত তথ্যের সূত্র ধরে গত ২০শে মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহা পরিচালক জনাব ডা. টেড্রস আধানম ঘেবড়েয়েসুস [৩] যুবকদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, “পৃথিবীতে ৫০ বছরের কম বয়সী রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি এবং তোমরা অপরাজেয় নও। এই ভাইরাস তোমাদেরকেও কয়েক সপ্তাহের জন্য হাসপাতালে পাঠাতে পারে, এমনকি তোমাকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করতে পারে”।
অতএব, উপরোক্ত পরিসংখান অনুযায়ী এটা পরিষ্কার যে, কম বয়সীদের (১৫ – ৫৯ বছর) মৃত্যুর ঝুঁকি গড়ে ৫ শতাংশ হলেও তা ৭০ বছরের বেশি বয়সী রোগীর ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের সমান।

যুক্তি নম্বর – ২: কাজে না গেলে সংসার চলবে কিভাবে (খেটে খাওয়া মানুষ)? দেশের অর্থনীতির কি হবে (শিক্ষিত সমাজ)?
১৬.২ কোটি মানুষের দেশ এই বাংলাদেশ [৪], যার স্বপ্ন ২০২১ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ রূপে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া [৫]। আমরাও চাই দেশের সরকারের সাথে হাতে-হাত, কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে দেশটাকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যেতে। পৃথিবীর বেশিরভাগ উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের উন্নতির পিছনে জনশক্তিই ছিল অন্যতম হাতিয়ার। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে হলে আমাদেরও দরকার দক্ষ জনশক্তি। আজকে এই জনশক্তিকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
আজকের এই বিপদের সময়ে (মহামারী) আমাদেরকে একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে হবে। আমাদেরকে এই মহামারীর প্রকোপ সম্পর্কেও ভাবতে হবে। মানুষের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আগে এই মহামারী সম্পর্কে নিজে ভালোভাবে জানতে হবে, তারপর মানুষ কে ভালোভাবে জানাতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোনো ভাবেই যেন আমরা ভুল তথ্য দিয়ে মানুষদেরকে আতঙ্কিত না করি। অতএব, বাঁচতে হলে যেমন খেতে হবে, তেমনি জানতেও হবে। শুধু জানলেও হবে না, মানতেও হবে।
আজকে যারা দেশের অর্থনীতি নিয়ে এত বেশি চিন্তিত – হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি। কোথায় ছিলেন আপনারা? যে দিন ১/২ ঘন্টার বিরতি অজু, নামাজ, দুপুরের খাবারের অযুহাত দিয়ে ২ ঘন্টা পার করতেন। কোথায় ছিলেন আপনারা? যে দিন আপনার ছাত্রদের বসিয়ে রেখে একটু বাড়তি ইনকামের আশায় বাহিরে যেতেন। কোথায় ছিলেন সেদিন আপনারা প্রিয় শিক্ষিত সমাজ?
আসুন আমরা সবাই মিলে এই মহামারীর মোকাবেলা করি। পৃথিবীটাকে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করি।